১ কেজি কলা – শেরপুর, বগুড়া। বগুড়া ভ্রমণে আমাদের এক দারুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। আজকের ভ্রমণ কাহিনীতে আমি শেরপুরের এটা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কথা আপনার সাথে শেয়ার করব।
চলুন শুরু করা যাক…
আরওঃ বিমান সুন্দরীগণ সেদিন আমার কথা রাখলেন না
১ কেজি কলা
কলা কখনও কেজি দরে বিক্রি হয় শুনেছেন?
তখন রাত প্রায় ৯ঃ৪৫ মিনিট। হঠাৎ করে গাড়ি ব্রেক করায় নিজের শরীরে একটা ঝাঁকুনি অনুভব করলাম। পরক্ষনেই চোখ মেলে এদিক-ঐদিক তাকালাম। আমার পাশের সিটে বসে থাকা মোহাইমিনুল আমাকে বলল, ভাই আমরা চলে এসেছি। চলেন নামতে হবে। আমি অবাক হয়ে বললাম, আমরা কোথায় এসেছি?
আমার কথা শুনে মোহাইমিনুল আর কর্নেল জসিম একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে মিট মিট করে হাসতে শুরু করল। আবার কি মনে করে হাসি থামিয়ে বলল, ভাই আমরা শেরপুর চলে এসছি। আপনি বাসে উঠেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন।
তারপরেই আমার সব কিছু ধিরে ধিরে মনে পরতে থাকল। তাইতো, আমরা তো বগুড়া ভ্রমণে এসেছি। শেরপুরেই তো নামার কথা। এখানে তো আমার জন্য একজন অপেক্ষা করবে বলেছে, সেকি ইতিমধ্যে চলে এসেছে! আমি তাকে ফোন করার জন্য প্যান্ট এর পকেট থেকে মোবাইল বের করলাম।
হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় মাথাটা একটু ঝিম ঝিম করছে। তবে, ঘুম খুব একটা মন্দ হয় নি। গতরাতেই কি কারনে যেন, সারা রাত ঘুমাইনি। ও মনে পরেছে, ওয়েবসাইটের একটা বাগ ঠিক করতে গিয়ে অনেক সময়ই লেগে গিয়েছিলাম। তাই সকাল ৯ঃ৩০ এর দিকে ঘুমাতে গিয়েছিলাম।
আমরা শেরপুর বাস স্ট্যান্ড নামলাম। এই প্রথম আমি বগুড়া এসেছি। উত্তরবঙ্গে প্রথম ভ্রমণ আমার। এখানের মানুষ এবং তাদের জীবনযাত্রা নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। ইচ্ছে আছে তাদের সাথে মিশে তাদের জীবনের গল্প গুলো শুনা এবং তাদের সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা নেয়া।
শেরপুর নেমে আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে থাকলাম কারন, আমার সাথে যিনি দেখা করতে আসবেন তিনি এখনও এসে পৌঁছাননি। ফোনে বললেন, ১০ মিনিট এর মত লাগবে আসতে।
আমরা চা পান করার জন্য টি-স্টল খুঁজতে থাকলাম। আমরা যেখানে বাস থেকে নেমেছি সেটাকে শেরপুর বাস স্ট্যান্ড বাজার বলা হয়। শেরপুর বাস স্ট্যান্ড বাজার খুব বেশি বড় নয় আবার একেবারে ছোটও নয়।
ঢাকা-বগুড়া হাইওয়ের দুই পাশে ছোট-বড় অনেক গুলো দোকান মিলে এই বাজার। আমরা জানি বগুড়া জেলা দই এর জন্য বিখ্যাত। আর বিখ্যাত এই দই এর বিখ্যাত দোকান গুলো এই শেরপুর বাস স্ট্যান্ড বাজারেই অবস্থিত!
কলা! ১ কেজি কলা
শেরপুর বাজারে ভালো মানের তেমন কোন রেস্টুরেন্ট বা কফিশপ নেই। আমরা বেশ কিছুক্ষণ এদিক-ঐদিন খোজা খুজি করে এটা ছোট চায়ের দোকান পেলাম। দোনাকের উপরে কাপড় দিয়ে ছাউনি দেয়া এবং চারপাশটা খোলা।
আমরা চা পান শেষে রাস্তার পাশে কলার ঝুড়ি নিয়ে বসে থাকা এক লোক কে কলার দাম জিজ্ঞেস করলাম। পরক্ষনে তিনি আমাদের কাছে যা জানতে চাইলেন তা আমরা তিন জন এর আগে কখনও শুনিনি!
তিনি আমাদের কাছে জানতে চাইলেন, কত কেজি কলা দিব? আমরা শুনেতো অবাক। এই কথা শুনার পর প্রায় ৫ সেকেন্ড সময় কেটেগেলো কারও মুখে কোন কথা নেই।
আমরা বিব্রত এবং অবাক আমাদের অবস্থা দেখে কলা ব্যবসায়ীও বিব্রত এবং অবাক!
কলা কি কেজিতে বিক্রি হয় নাকি! কলা তো বিক্রি হয় হালি অথবা ডজনে। আমরা জন্মের পর থেকে এটাই শুনে এসেছি। বিক্রিও করতে দেখেছি এভাবে। কিন্তু কলা বিক্রি হয় কেজিতে এটা এই প্রথম শুনালাম আমরা।
আমাদের এই বিব্রত বোধ কাটল মোহাইমিনুল এর পাল্টা প্রশ্নের মাধ্যমে। মোহাইমিনুল কলা ব্যবসায়ী কে বলল, আপনি কি ভুল কিছু বলছেন। এক ডজন কলা কত রাখবেন বলেন।
কলা ব্যবসায়ী আবারও বলেন, কত কেজি নিবেন! কি মুছিবত!
পরক্ষনে আমরাই ব্যাপারটা বুজার চেষ্টা করলাম। লোকটা বার বার কেনো কেজির কথা বলছে যেখানে, কলা বিক্রি হয় হালি অথবা ডরজনে!
এবার লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই, আপনি মজা করছেন আমাদের সাথে? কলা তো কেজিতে বিক্রি হয় না, হালি অথবা ডজনে বিক্রি হয়।
এবার ওনার চেহারা দেখে মনে হল, আমাদের কথা শুনি তিনি আবার বিব্রত! তিনি এই জিবনে এই টাইপ কথা কখনও শুনেন নি।
এই বিব্রতকর পরিস্থিতির মাঝে অপেক্ষমাণ সেই সিহাব ভাই চলে আসলেন। তারপর ওনার কাছ থেকেই জানতে পারলাম বগুড়াতে কলা কেজি দরে বিক্রি হয়। এখানে হালি বা ডজন এর কোন সিস্টেম নেই।
এই কথা শুনে আমরা হু হু করে হেসে উঠলাম, সিহাব ভাইও আমাদের সাথে হেসে উঠলেন। সেই হাসি মিশে গেলো শেরপুরের অন্ধকার বাতাসে।
ভ্রমণ কাহিনীঃ ১ কেজি কলা – শেরপুর, বগুড়া
#VromonKahini #Vromon_Kahini
ফেসবুক: Kuhudak
Great info. Lucky me I ran across your site by chance (stumbleupon). I have book marked it for later!
thanks